নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম ॥ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পাহাড় ও নদীবেষ্টিত অপরূপ সৌন্দর্যের একটি ইউনিয়ন ধোপাছড়ি। সেখানে পাহাড়ী-বাঙালি সহাবস্থানে থেকে বসবাস করছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও এ ধোপাছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে বনবিভাগ। এ অভিযোগ স্থানীয়দের।স্বাধীনতা অর্জনের পর এত বছরেও ভাগ্যোন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ধোপাছড়িবাসী। আধুনিক এ যুগে সারা বাংলাদেশে সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯২-৯৩ সালে তৎকালীন সরকারের গাছবাড়ীয়া কলেজ গেইট থেকে সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল । দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার সড়ক ইট বসিয়ে করার পর সরকার পরিবর্তনের কারণে বাকি অংশ কাঁচা সড়ক হিসেবে থেকে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আবার সড়কটি সংস্কারের তালিকায় আসে। সড়ক দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করা শুরু করে। ফলে সাড়ে ১৬ কি.মি. সড়কের বাকি অংশ সংস্কারের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি সড়ক পথে ধোপাছড়ি গিয়ে সড়কটির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। সে থেকে ধোপাছড়ির মানুষ সড়ক পথে গাছবাড়ীয়া হয়ে মাত্র ৩০ মিনিটে চন্দনাইশে আসতে পারে। অপরদিকে দোহাজারী হয়ে লালুটিয়া দিয়ে একই সময়ে সড়ক পথে আসার সুযোগও সৃষ্টি করা হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলে সড়কটি ক্ষত-বিক্ষত হলে চলতি অর্থ বছরে সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সংস্কারের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বন বিভাগ।বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটি বনবিভাগের ধোপাছড়ি-দুধপুকুরিয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অংশ। বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এভাবে সড়ক হওয়া সমীচীন নয়। যদি সড়ক নির্মাণ করতে হয় তাহলে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করতে পারে। এটা একটি পায়ে হাঁটার রাস্তা ছিল, ভিলেজারেরা চলাচল করত। তারা পাহাড় কেটে নতুনভাবে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে। বিষয়টি গত বছরের আগে আমাদের নজরে আসার পর ২০২১ সালের মাঝামাঝি জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভায় আলোচনা হয়। যেহেতু পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ সেহেতু সিদ্ধান্ত হওয়ার পর স্ববিস্তারে নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেই। তারাও এ কমিটির সদস্য। তাদেরও একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা কাজ করেই যাচ্ছেন, এ বছরও তাদেরকে চিঠি দিয়েছি এবং বারণ করেছি। বীট কর্মকর্তা প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৩ কিলোমিটার ফরেস্টের জায়গা। তিনি আরও বলেন, লালুটিয়া থেকে ধোপাছড়ি পর্যন্ত সড়কটি বর্তমান সংসদ সদস্যের সহায়তায় হয়েছে, সেখানে আমরা সহযোগিতা করেছি। সরকার যদি মনে করে সড়ক করার প্রয়োজন আছে তাহলে করবে, তবে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করতে হবে।বন বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের প্রয়োজনে বন বিভাগের জায়গায় ক্যান্টনমেন্ট করেছে, ইন্ডাস্ট্রি করছে। নিচে বা জেলা, উপজেলা পর্যায়ে দ্বন্দ্ব করে লাভ নেই। বিট কর্মকর্তা, বন আইনে যারা কাজ করছে তারা মামলা করে দিতে পারে। কেউ বলতে পারে না যে, বনের প্রয়োজন নেই, এটা সরকার বলবে। যে জায়গায় মানববন্ধন করেছে সেখানে পাহাড় কাটার সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সড়ক নির্মাণ হোক, আমরা বাধা দেব না। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে। এ বিষয়ে সংবাদটি সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের নজরে এসেছে। সামনে সংসদীয় কমিটির সভা রয়েছে সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। করায় আশাহত হয়ে পড়েছে সুবিধাবঞ্চিত এ ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। তাই সড়কটি সংস্কারে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন । আবদুল আলীম বলেছেন, জনস্বার্থে খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন। অন্যথায় এ আধুনিক যুগে ধোপাছড়িবাসীকে নৌকা যোগে চন্দনাইশ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হবে।