মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল,মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর বাকী অংশের কার্পেটিং শুরু হয়েছে। শনিবার বিকালে সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে এই কার্পেটিং শুরু হয়। এর আগে সম্পন্ন হয়ে গেছে মূল সেতুর পর কার্পেটিং। শেষ হতে চলেছে অপেক্ষার পালা। বাঙলীর অগ্রযাত্রার অনন্য দৃষ্টান্ত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে এখন প্রায় প্রস্তুত। তাই ২৫ জুন সেতু খুলে দেয়ার পরিকল্পনা ঘিরেই চলছে একেবারেই শেষ ধাপের কাজ। এছাড়া জোড়েসোড়ে চলছে সেতুর দুইপ্রান্তে নাম ফলক ও ম্যুরাল তৈরির কাজও। শুক্রবার জাজিরা প্রান্তে এবং বৃহস্পতিবার মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর নর্থ লেনে লেভেলিং কোড স¤পন্ন হয়েছে। এর আগে শেষ হয়েছে প্রাইম কোড। পরে মাওয়া প্রান্ত থেকে শনিবার বিকালে শুরু হয় সংযোগ সেতুর বাকী অংশের এই কার্পেটিং। মূল সেতুতে চার লেয়ারের ওয়াটার প্রুভিংয়ের উপর ১০০ মিলিমিটার পুরুত্বের দুই লেয়ারের কার্পেটিং স¤পন্ন হয়েছে। আর এখন সংযোগ সেতুতে চলছে ৫০ মিলিমিটার পুরুত্বের কার্পেটিং।এর আগে কার্পেটিং শুরুর কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে সেতু বিভাগ জানিয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে কার্পেটিং ৫৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে আছে। বাকি ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ করতে সময় লাগার কথা রয়েছে দুই সপ্তাহ। এখন সেতুটি আগামী মাসে খুলে দিতে চলছে নানা প্রস্তুতি। সেতু খুলে দেয়ার উদ্বোধন প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞ দেখে খুশি পদ্মাপাড়ের মানুষ।শনিবার মাওয়া নর্থ ভায়াডাক্টের ২০০ মিটার এলাকায় কার্পেটিং করার পরিকল্পনার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সেতু দিয়ে ট্রেন যাবে, গাড়ি যাবে, গ্যাস যাবে, বিদ্যুৎ যাবে, অপটিকেল ফাইবার হবে, তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। আগামী মাসে সেতু খুলে দিতে এখন প্রকল্প এলাকায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। আগামী দুই সপ্তাহে ভায়াডাক্টের বাকী ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে।সেতুর দুই প্রান্তে নাম ফলক ও মুর্যাল তৈরির কাজও পুরোদমে চলছে। স্বপ্ন যখন বাস্তবের দ্বার প্রান্তে তাই উচ্ছ্বাস পদ্মা পাড়ের মানুষের। পদ্মা সেতু শত বছর টেকসই করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকশার সবই বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানান এর মূল কারিগর পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মূল পদ্মা সেতুর ৯৮ শতাংশ ও পুরো প্রকল্পের কাজ সাড়ে ৯৩ শতাংশ স¤পন্ন হয়েছে।বিশ্ব ব্যাংক সরে গেলেও প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৫ জুন উদ্বোধনের টার্গেট রেখেই পুরোদমে চলছে শেষ সময়ের কর্মযজ্ঞ।পদ্মা সেতু চালু হলে বৈপ্লিবিক পরিবর্তন আসবে দক্ষিণাঞ্চলে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলায় জেলায় গড়ে উঠবে ছোটবড় শিল্প। কৃষির ব্যাপক উন্নতি হবে। কৃষকরা পণ্যের দাম ভালো পাবেন। উপকরণও সহজ্যলভ্য হবে। তাই উৎপাদন বাড়বে। দক্ষিণের জেলাসমূহের বার্ষিক জিডিপি ২.০ শতাংশ এবং দেশের সামগ্রিক জিডিপি ১.০ শতাংশের বেশি বাড়াতে সাহায্য করবে। সেতুটি নির্মাণে দেশের সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর উন্নতি হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়বে। পদ্মায় পানির প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে ১.৪০ লাখ ঘনমিটার । এমন উত্তাল নদীর ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ দশমিক ১০ মিটার পস্থের চার লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ এখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। সেতুর দুই পাশে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও বেসরকারি শিল্প শহর। ফলস্বরূপ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নতুন উদ্যমে চালু থাকবে। পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার, মাওয়া ও জাজিরায় পুরোনো-নতুন রিসোর্টসহ নতুন-পুরোনো পর্যটনকেন্দ্র দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এটির মাধ্যমে শুধু যাতায়াতেরই সুবিধা হবে না বরং এটি টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুত্ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এসব সুবিধা দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে প্রভাবিত করবে।সেতুর সড়ক পথে সাইন, সঙ্কেত ও মার্কিংয়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। আর চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্য থেকে অ্যালুমিনিয়াম রেলিং ও দুবাই থেকে রেলিং পোস্ট এসে পৌঁছাবে।পদ্মা সেতুর যান চলাচল উপযোগী করার বড় সব কাজই শেষ। তাই উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পদ্মা সেতু। এখন পর্যন্ত মূল পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৯৩ শতাংশ।